গোপনে পরীক্ষা নিতে গিয়ে তোপের মুখে নিয়োগ কমিটি, পরীক্ষা স্থগিত করে উধাও সংশ্লিষ্টরা
পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার একটি দাখিল মাদ্রাসায় গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের আবেদন করিয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে টোপের মুখে পড়ে মাদ্রাসার সুপারসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা। এসময় চাকরী প্রত্যাশীদের আন্দোলন ও অনশনে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যান সংশ্লিষ্টরা৷
আজ শনিবার (২০মার্চ) সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলাধীন তিরনই হাট ইউনিয়নের ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনাটি ঘটে৷ এর আগে মাদ্রাসার সুপারের অফিস কক্ষের সামনে সকাল ৭টা থেকে স্থানীয় মানুষ ও চাকরী প্রত্যাশিরা অবস্থান নেন৷
এসময় মাদ্রাসার সুপার জিয়াউল হক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব আলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী, ডিডি ও ডিজির প্রতিনিধি ও দুই পদের জন্য পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত হয়। এবং পরে ক্ষুব্ধ হয়ে মাদ্রাসার সুপার,কমিটির বিরুদ্ধে এবং পরীক্ষা বাতিলের দাবী নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেয় বঞ্চিত প্রার্থী ও স্থানীয়রা৷ এর আগে চাকুরী প্রত্যাশীদের পক্ষে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগও প্রদাণ করে তারা৷
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে জানান, ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শূন্য পদে থাকা একজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন আয়া পদের জন্য ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি দেখে স্থানীয় ৩২ জন প্রার্থী আবেদন করেন কিন্তু সেই সময় হঠাৎ করে মহামারী করোনা ভাইরাস দেখা দিলে সেই কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া মাদ্রাসা কমিটি বন্ধ রাখে এবং নিয়োগ পরীক্ষা দিতে তাল-বাহানা করে এবং বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে ঘুষ দাবী করে মাদ্রাসার সুপার ও ম্যানেজিং কমিটি ৷ অন্যদিকে দীর্ঘ দিন পর মাদ্রাসা কতৃপক্ষ পুনরায় দ্বিতীয় দফায় চাকুরী বিজ্ঞপ্তি গোপনে প্রকাশ করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে আবেদন করিয়ে গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করে৷ এতে বঞ্চিত হয় পূর্বের বিজ্ঞপ্তি দেখে যারা আবেদন করেছিল সেই আবেনকারীরা।
এদিকে আজ শনিবার (২০ মে) সকালে সেই দুই পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এমন গোপনে খবর পেয়ে স্থানীয় মানুষ ও বঞ্চিতরা সকাল থেকে মাদ্রাসার সুপারের অফিস কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন ও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পরীক্ষা বন্ধের দাবী তুলেন। এসময় তাদের আন্দোলনের টোপের মুখে পড়ে সংশ্লিষ্টরা পরিক্ষা স্থগিত করেন এবং কৌশলে দ্রুত মাদ্রাসা ত্যাগ করে চলে যান ।
এদিকে মাদ্রাসা কমিটির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে স্থানীয়সহ চাকরী প্রত্যাশরীরা ৷ কমিটির সদস্যের দাপট দেখিয়ে সোলেমান আলী নামে অবিভাবক তার মেয়ে ও বোনকে আয়া পদের জন্য তকদির করে আবেদন করান৷ সলেমান আলী নামে ওই সদস্যের ছেলে আগে মাদ্রাসিতের লেখাপড়া করলেও পরবর্তীতে ভর্তি হয় মাদ্রাসার পাশে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ ফলে সন্তান লেখাপড়া না করলেও তিনি অবিভাবক সদস্য পদে বহাল রয়েছেন এবং এবং মেয়ের চাকুরীর জন্য করছেন দৌড়ঝাপ। সন্তান লেখাপড়া না করেও কিভাবে অবিভাবক সদস্য হিসাবে রয়েছেন এবং এই পরীক্ষার গোপনে করার বিষয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগে তার বিচার দাবী করেন আনদোলনকারীরা৷
এবিষয়ে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরী প্রত্যাশী নুরুজ্জামান জানান,আমরা ২০২০ সালে আবেদন করলেও সেই বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে মাদ্রাসার সুপার ও কমিটি নতুন করে গোপনে বিজ্ঞাপ্তি দিয়ে আজকে গোপনে পরীক্ষা নিতে আসলে পরে আমরা বিষয়টি জানতে পারি৷ তারা তাদের নিজের স্বজনদের আবেদন করিয়ে আমাদের বঞ্চিত করেছে। মেধার ভিত্তিতে চাকুরী হউক এবং সেটা প্রকাশ্যে হউক এটাই আমাদের দাবী৷
একই অভিযোগ করেন আয়া পদে চাকুরী প্রত্যাশী মাহমুদা বেগম,তিনি বলেন,আমি ২০২০ সালে আবেদন করি আয়া পদে কিন্তু পরীক্ষা না নিয়ে আবার নতুন করে বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করেছে গোপনে৷ আমরা মাদ্রাসার সুপার ও কমিটির লোকজন বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে টাকা চেয়ে ছিল আমরা দিতে না পারায় কৌশলে তাদের লোকজনকে চাকুরী দেয়ার জন্য আজকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করেন। আমরা এটার সুষ্ঠু বিচার চাই এবং নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি ।
মাহমুদার স্বামী মনসুর আলী জানান, মাদ্রাসার সুপার ও কমিটির লোকজন মোটা অংকের ঘুষ দাবী করায় আগের প্রার্থীেদের বাদ দিয়ে নতুন করে আবেদন করিয়ে নিজেদের লোকদের নিয়োগ দেয়ার জন্য পরীক্ষার আয়োজন করে৷ আজকে জানতে না পারলে তারা নিয়োগ দিয়ে দিতো আর মেধাবীরা বাদ পড়ে যেতো তাই আমরা সুষ্ঠু নিয়োগ পরীক্ষার দাবী জানাই৷
এদিকে ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জিয়াউল হক বলেন,নৈশ্য প্রহরী ও আয়া পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ আগে হয়েছিল কিন্তু করোনার কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আজকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করা হলে এসময় কয়েকজন মাদ্রাসায় এসে দাবী তুলেন নতুন করে যেন বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা নেয়া হয়৷ সব কাগজপত্র দেখে সংশ্লিষ্টরা তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে পরীক্ষা স্থগিত করেন। তবে তিনি প্রার্থীদের কাছে অর্থ চাওয়ার বিষয়ি এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব আলী বলেন,নিয়োগ পরীক ছিল শনিবর সকালে কিন্তু স্থানীয়রা বলেন নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা দেখার পর পরীক্ষা স্থগিত করেন।
এবিষয়ে মাদ্রাসার অবিভাবক সদস্য সোলেমান আলী জানান,আমার ছেলে আগে মাদ্রাসায় পড়লেও এখন প্রাইমারিতে পড়ে। আগে থেকেই মাদ্রাসার কমিটিতে ছিলাম৷ ভাল কাজ কাজ করলে শত্রু থাকবেই তাই কিছু মানুষ এমন করতেছে৷
এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলীর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি৷