ইমেরিটাস অধ্যাপক হলেন পাবনার কৃতিসন্তান ড. খন্দকার বজলুল হক

0 ৮১

ইমেরিটাস অধ্যাপক হলেন পাবনার কৃতিসন্তান ড. খন্দকার বজলুল হক

Dhaka post today
নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইমেরিটাস অধ্যাপক’ হিসেবে নিয়োগ পেলেন পাবনা জেলার কৃতিসন্তান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা, গবেষণা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন বিভাগের ছয় জন স্বনামধন্য অধ্যাপককে ‘ইমেরিটাস অধ্যাপক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাবনা জেলার এই সন্তান যিনি সর্বপ্রথম এই অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করলেন।

অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একাধিক বার নির্বাচিত সাবেক সভাপতি, অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক ১৯৪৬ সালের ১ মার্চ পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খন্দকার জোনাব আলী তাঁর পিতা এবং সৈয়দা মাহফুজুন্নাহার বেগম তাঁর মাতা। খন্দকার বজলুল হক লক্ষ্মীপুর ফ্রী প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।

ধোবাখোলা করনেশন হাইস্কুল থেকে ১৯৬১ সালে তিনি ম্যাট্রিক, চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্যিক কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে আইকম, একই কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে বিকম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে এমকম ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ইকোনমি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে ইনস্টিটিউট অন ডেভেলপিং ইকোনমিক্স থেকে এবং ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর পোস্ট ডক্টরোল ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬৭ সালের ২৭ আগস্ট গাজীপুরের কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজে বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে খন্দকার বজলুল হক শিক্ষাকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৭০ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক, ১৯৮৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য (৩ বার), অর্থ কমিটির সদস্য (৩ বার), সিন্ডিকেট সদস্য (২বার) হিসেবে অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক হলের প্রভোস্ট (১৯৮৪- ১৯৮৭), জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট (১৯৯৬- ১৯৯৭), ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি (১৯৮৬-১৯৮৯), বাণিজ্য অনুষদের ডিন (১৯৮৯-১৯৯১) এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য (১৯৯৭-২০০২), অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান (২০০৯-২০১৪) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সভাপতি ও অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সংগে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে ছাত্রলীগের সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে থেকে স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে খন্দকার বজলুল হক একজন সংগঠনকের দায়িত্ব পালন করেন, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বকীয় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রী লায়লা হক মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ হন।
অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য এবং বন ও পরিবেশ উপ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে অনারারি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।

দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জার্ণালে তাঁর ৬০ টির বেশি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি এবং আমেরিকান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনিস্টিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ নির্বাহী কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশানস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশেস্থ এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন এবং বোর্ড অব এডিটরস, বাংলাদেশ এন সাইক্লোপিডিয়া প্রজেক্টের সদস্য অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শহিদ লায়লা হক-মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার বজলুল হক ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়। উক্ত ফান্ডে তিনি ১৫ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। এই ট্রাস্ট ফান্ডের আয় থেকে প্রতিবছর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের বিবিএ ফাইনাল পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৯৬ সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে ‘শহিদ সৈয়দা লায়লা হক স্মৃতি স্বর্ণপদক’ প্রদান এবং বিভাগের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হয়।

বর্তমানে তিনি অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি’র সভাপতি (২০২২- ২০২৩) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক পাকিস্তান, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, অস্ট্রেলিয়া, চেকোশ্লোভেকিয়া, যুগোশ্লোভিয়া, জাপান, তাইওয়ান, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, পর্তুগাল, প্রভূতি দেশ ভ্রমণ করেন। এই বর্ণালী জীবনে তিনি জাতি ও দেশের জন্য সব সময় নিবেদিত থেকেছেন।
অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক ব্যক্তিজীবনে তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বাংলার সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার বজলুল হক পাবনার মানুষের প্রতি নিবেদিত এক মহাপ্রাণ ব্যক্তিত্ব। তিনি সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করেন ও মেহনতি মানুষকে ভালোবাসেন।
তাঁর আজীবন সুস্থতা ও নেকহায়াতে মুবারক কামনা করছি- আমীন

Leave A Reply

Your email address will not be published.