রাজধানীতে আনোয়ার ও তাসলি চক্রে জিম্মি অটোরিকশা

0 ২৩৭

রাজধানীতে আনোয়ার ও তাসলি চক্রে জিম্মি অটোরিকশা” রয়েছে ছয় সদস্যের চক্র!!

dhaka post today

এম রাসেল সরকার:

গাজীপুর দ-১১০০৩৩ নম্বরের সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি রাজধানীতে নিয়মিত ভাড়ায় চলাচল করে। অথচ গাড়িটির সামনে লেখা রয়েছে ‘জরুরি আমদানি ও রপ্তানি কাজে নিয়োজিত’। ‘সংবাদপত্রের জন্য ব্যবহৃত’ স্টিকার লাগানো গাজীপুর দ-১১৮৫৪৩ সিরিয়ালের অটোরিকশাটি দিব্যি যাত্রী পরিবহন করছে দিনের পর দিন। নিয়ম অনুযায়ী এই গাড়িগুলোর রাজধানীতে চলাচলের বৈধতা নেই। শুধু এই দুটি নয়, রাজধানীতে অবৈধভাবে চলা এমন সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার, যা মহানগরীতে চলাচলের জন্য অনুমোদিত এ ধরনের যানের চেয়েও বেশি।

সিএনজি অটোরিকশার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ঢাকা জেলা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জে নিবন্ধিত এসব যান অহরহ চলছে ঢাকা নগরীতে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রক তাসলিমা নামের এক নারী। ‘তাসলি’ নামেই পরিচিত পরিবহন খাতের এই সম্রাজ্ঞী। ট্রাফিক পুলিশ ও অটোরিকশাচালকরা তাকে চেনেন ‘তাসলি ম্যাডাম’ বলে।

নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া এই নারীর রয়েছে ছয় সদস্যের একটি চক্র। একেকটি সিএনজির জন্য তাকে মাসোহারা দিতে হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। বিনিময়ে পুলিশি ঝামেলা থেকে শুরু করে সব ধরনের জটিলতা সামলান তাসলিমা ওরফে তাসলি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ডাম্পিংয়ে পাঠানো গাড়িও ছাড়িয়ে আনেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, তাসলিমা ওরফে তাসলির গ্রামের বাড়ি খুলনা অঞ্চলে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় আসেন তিনি। কমবেশি পড়াশোনাও করেছেন। তাসলি বর্তমানে থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকার বিদ্যুৎ গলিতে। সঙ্গে থাকেন তার ছোট বোনও। দিনভর যাত্রাবাড়ী মোড়ে আড্ডা দেন তাসলি। মাঝেমধ্যে পল্টন ও মতিঝিল, গুলিস্তান ও শান্তিনগর এলাকায় তাকে দেখা যায়। আরও জানা যায়, ঢাকার আশপাশের জেলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাজধানীর ভেতর প্রবেশ ও চলাচল বন্ধের পর থেকেই যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় কিছু লোকজন নিয়ে নতুন পথে পা বাড়ান তাসলি।

শুরুতে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সখ্য করে নারায়ণগঞ্জের গাড়ি রাজধানীতে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। আস্তে আস্তে আশপাশের জেলায় তার নাম ছড়িয়ে যায়। চাঁদা নিয়ন্ত্রণে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। এরপর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এজেন্ট নিয়োগ করেন তিনি। তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত সবুজ আর আনোয়ার ভান্ডারী। তারাই আস্তে আস্তে সদস্য বাড়িয়ে পুরো রাজধানী নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। জানা গেছে, তাসলির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তার ক্ষমতার নেপথ্যে আছে পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। মূলত তার খুঁটির জোর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের লোকজন। টি-শার্টের ওপর হাফহাতা জ্যাকেট পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দিনভর ঘুরে বেড়ান তাসলি।

মূলত তিনি কোনো পত্রিকার সাংবাদিক নন। জানা গেছে, রাজধানীর ভেতরে বাইরের কোনো অটোরিকশা পুলিশ ধরলে কিংবা মামলা করলে মালিক কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যান না। এসব কিছুই সামলান তাসলিমা। রাস্তায় দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই), কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের বড় কর্তাদের সঙ্গে রয়েছে তার দহরম মহরম। তিনি ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে, এমনকি টেলিফোনে কথা বললেই সব মুশকিল আসান! শুধু তাই নয়—চোরাই গাড়ি বেচাকেনার সঙ্গেও জড়িত এই চক্র।

২০০৬ ও ২০০৭ সালে পরিত্যক্ত ঘোষিত অটোরিকশার বাতিল হওয়া একেকটি নম্বর ব্যবহার করে একাধিক গাড়ি চালানোরও অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। সব কিছুর পেছনেই কাজ করে টাকা। সিএনজি অটোরিকশার মাসিক চাঁদাসহ নানা খাত মিলিয়ে তাসলিমার মাসিক আয় কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা! সড়ক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে ভাগ হয় এই টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালাল চক্রের মাধ্যমে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে অটোরিকশা এনে ‘মেট্রো’ লেখা নম্বরপ্লেট লাগিয়ে বিক্রি এবং রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয় তাসলিমা চক্র। আবার অনেকে বেশি আয়ের জন্য মহানগরীতে অটোরিকশা চালাতে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে প্রথমে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন।

মাসিক চুক্তিতে এসব গাড়ি রং বদলে ঢাকায় চলাচলের উপযোগী করা হয়। চক্রের একই ব্যক্তি একাধিক নামে বিভিন্ন এলাকায় পরিচিত। সদস্যদের কেউই তাদের আসল নাম ব্যবহার করেন না। যেমন, ঢাকার একেকটি এলাকায় দাপট দেখান এই চক্রের সদস্য সজিব, মোশারফ ও সেলিম। এই তিনটি নাম মূলত একই ব্যক্তির। তার মতো আছেন আরও কয়েকজন। তারাই তাসলির পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সঙ্গে আছেন তাসলিমার বোন পরিচয় দেওয়া আরেক নারী। তালিকা অনুযায়ী কোনো চালক মাসিক টাকা পরিশোধ না করলে পরে পুলিশ দিয়ে তার অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

‘দৈনিক শব্দমিছিল’ পত্রিকার স্টিকার লাগানো বেশকিছু অটোরিকশা রাজধানীতে চলাচল করতে দেখা যায়। মূলত পত্রিকার নাম ব্যবহার করে ঢাকার বাইরের এসব গাড়ি মেট্রো নম্বর দিয়ে রাজধানীতে ভাড়ায় চলে। পত্রিকার স্টিকার লাগানো এরকম কয়েকটি গাড়ির মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মেট্রো-থ-১১-৬১১৫, ১১-১৭৭৩, ১১-৬৬৬৭, ১১-৭২৮০। পত্রিকাটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে রাজধানীর ২৯৮ ইনার সার্কুলার রোড, আরামবাগ। সেখানে গিয়ে পত্রিকার নিজস্ব কোনো অটোরিকশা পাওয়া যায়নি। পত্রিকাটির প্রকাশনাও অনিয়মিত বলে জানা গেছে। মূলত তাসলি সিন্ডিকেট পত্রিকার নাম ব্যবহার করে এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে।

তাসলির সাথে কথা বলার জন্য যাত্রাবাড়ী মোড়ে তার নিয়মিত আড্ডাস্থলে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তার একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন তাসলি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাসলির অন্যতম এক সহযোগী জানান, গ্রুপের কেউ-ই আসল নাম বা পরিচয় ব্যবহার করেন না। সদস্যরা বিভিন্ন নামে পরিচিত। মোবাইল ফোনেই বেশিরভাগ কাজ হয়। পুলিশ গাড়ি ধরলেও ফোনে খবর পেয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। চালক কিংবা গাড়ির মালিকদের বেশিরভাগই এই গ্রুপের কাউকে সরাসরি চেনেন না। মোবাইল নম্বরেই যোগাযোগ ও মাসিক চাঁদার লেনদেন হয়। মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন

Leave A Reply

Your email address will not be published.