বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সাংবিধানিক
dhaka post today
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে একটি অবৈধ সরকার। তারা অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু আজকের এই প্রেক্ষাপটে ভোট চুরির প্রকল্পের মধ্যে আছে, দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী। এছাড়া আছে ভোট চুরির প্রকল্পে নতুন সংযোজন আওয়ামী বিচারক লীগ। এটা নতুন এডিশন।
বুধবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আইনজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের উদ্যোগে জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আমীর খসরু বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে এর মধ্যে বিচারক লীগ নতুন সংযোজন। আমাদের একটি বিষয় বুঝতে হবে, সেটা হচ্ছে এই বিচারক লীগের ভূমিকা কী? এই যে প্রেক্ষাপটটা সৃষ্টি হয়েছে বিচার বিভাগের যে নতুন অ্যাক্টর যারা নিজেদের আধা প্রকাশ করতে পারে। আগে প্রকাশ না করে কাজ করেছেন, এখন নিজেদের প্রকাশ করছেন। প্রকাশ করার পেছনে যে বার্তা জাতি পেয়েছে, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশের এই গোষ্ঠী যারা একটি ভোট চুরির প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের সাংবাধিক, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে টিকে আছে তার মধ্যে এই বিচারক লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, কোর্টগুলোতে এখন নাগরিকরা সুরক্ষা তো পাচ্ছেই না বরং অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছে। ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতা কর্মী প্রতিদিন কোর্টে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। বিচারকের মূল ভূমিকা ও তাদের শপথ হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিচারের সুরক্ষা করবে। তারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবে। তারা কোনো রাজনীতিতে অংশ নেবে না। এটা কোর্ট অব কন্ডাক্ট। এটা বিশ্বজুড়ে। রাজনীতিতে তারা ভাবাবেগে প্রভাবিত হয়ে কিংবা নিজের মতামতে প্রভাবিত হয়ে তারা বিচার করতে পারবে না। এটা তো বাংলাদেশে নেই।
খসরু বলেন, বিচারককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংবিধান রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে ভোটাধিকার হচ্ছে অন্যতম অধিকার। ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহক। ভোট ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সাংবিধানিক অধিকার সে ভোটের মধ্যে প্রকাশ করে।
তিনি আরও বলেন, এক বিচারক বলছে বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। অথচ তার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইন রক্ষা করা। কোন দল ক্ষমতায় আসবে এটা কি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? তাদের কথাবার্তায় কি প্রকাশ পায় না তারা কি চাচ্ছে বাংলাদেশে। বিচারকরা এমন কি উপদেশও দিতে পারে না। এমন উপদেশ দিতে পারে না যেটা তার নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। যেটা তার রাজনৈতিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। এটা হচ্ছে বায়াস্টনেস। এটা সে দিতে পারে না।
খসরু বলেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আপনার ভোট কেড়ে নিচ্ছে। নেতা শূন্য, কর্মী শূন্য, একটা নির্বাচন তাদের মাধ্যমে করাতে চাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ৪০ লাখ নামের সঙ্গে আরও কয়েক লাখ যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন এখন হেয়ারিং হচ্ছে। আবার সেই নির্দেশ আসছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠিগুলো সহজে গণমাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে। তারা বিচারবিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছে প্রতিদিন যেতে হবে সাক্ষী দিতে। যে পুলিশ অফিসার সাক্ষী দেবে না তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হবে।
আমীর খসরু বলেন, বিচারকদের বলা হয়েছে দ্রুত বিচার শেষ করে দলকে নেতাশূন্য করে এমন নির্বাচনী পরিবেশ যাতে তারা আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে। এই সমস্ত বিচারক, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও লুটেরা ব্যবসায়ী এদের সবার কাজ কিন্তু একটাই। সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে বাইরে রেখে আবার ক্ষমতা দখলে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করা। এই সমস্ত বিচারক যারা এসব কাজ করছে তারাও কিন্তু ভোট চুরি প্রকল্পের একটা অংশ। যে সমস্ত বিচারক ভোট চুরির প্রকল্পের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, আপনারা চেয়ার থেকে অব্যাহতি নিয়ে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হয়ে যান। কারও কোনো আপত্তি থাকবে না।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, শেখ হাসিনা ১৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে ভোট চুরি করেছিল। কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ভোটও চুরি করে নিয়ে গেছে। তারা এখন শপথবদ্ধ রাজনীতি শুরু করেছে সমস্ত বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু বিচারকের আসনে বসে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সর্বশেষ কাঁচা মরিচকেও সিন্ডিকেট করে খেয়ে ফেলেছে। শেখ হাসিনা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। দেশের সব টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। ওবায়দুল কাদেরকে রেখেছে এর পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য। তিনি আগে বলতেন, খেলা হবে, এখন কিন্তু আর বলে না। এখন আবার নতুন করে বলা শুরু করেছে, তত্ত্বাবধায়কের কথাতো বিদেশিরা বলে নাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। তাই সরকার সেটাকে ধ্বংস করতে চায়। দেশের আজকের পরিস্থিতির জন্য বিচারপতি খাইরুল হক দায়ী। তখন সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বলেছে কিন্তু শেখ হাসিনা এই বিধান বাতিল করে দিয়েছে। উচ্চ আদালতকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দেশ এখন সংকটকাল পার করছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগকে শেষ করে দিয়েছে। বিচারপতি এসকে সিনহাকে জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার যা চায় বর্তমান বিচারকরা তাই রায় দিচ্ছেন। তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের রায়ও এ ধরনের বিচারপতিদের কাছ থেকে এসেছে। আগামীতে এদেরকে বর্জন করা হবে।
ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জহুরুল আলমের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ ইসলামিক লইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দীন সরকার ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।