কিশোরগঞ্জে একমাত্র পুত্রের হাতে পিতা খুনের রহস্য উদঘাটন
কিশোরগঞ্জে একমাত্র পুত্রের হাতে পিতা খুনের রহস্য উদঘাটন
নিজস্ব সংবাদদাতা
কিশোরগঞ্জের নগুয়ায় বহুল আলোচিত একমাত্র পুত্রের হাতে “পিতা” ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আউয়াল (৪৮) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ ঘাতক ছেলে আসামী মোঃ রাসেল (২৩) কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ১১.৩০ টায় নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন শিবু মার্কেট বটতলা রেইলগেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত্র অনুমান ০২.৩০ টায় সময় ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আউয়াল (৪৮), সাং-নগুয়া বটতলা, থানা ও জেলা-কিশোরগঞ্জকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামী মোঃ রাসেল (২৩) শাবল দিয়ে মাথার সামনে বাম পার্শ্বে আঘাত করে গুরুতর ছিদ্রযুক্ত কাটা রক্তাক্ত জখম ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের হাতে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়া মাথা সহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে। উক্ত আঘাতের ফলে ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আউয়াল (৪৮) এর মৃত্যু হয়।
এ সংক্রান্তে নিহতের পিতা বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় এজাহারনামীয় ০৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানার মামলা নং-৩১, তারিখ-১৪/০৯/২০২৩ ইং, ধারা-৩০২/১১৪/৩৪ দঃ বিঃ আইনে হত্যা মামলা দায়ের করিলে অফিসার ইনর্চাজ, কিশোরগঞ্জ মডেল থানা মামলাটি রুজু করত ইন্সপেক্টর (নিঃ) শ্যামল মিয়া এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলার মডেল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করেন। উক্ত ঘটনার পর হতে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করত ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। মামলাটি পিবিআই সিডিউলভূক্ত হওয়ায়, পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা মামলাটি গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ অধিগ্রহন করে।
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি, জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই কিশোরগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ, পুলিশ সুপার, জনাব মোঃ শাহাদাত হোসেন, পিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ)/মোঃ সাখরুল হক খান এর নেতৃত্বে পিবিআই কিশোরগঞ্জের চৌকস টিম গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ১১.৩০ টায় নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন শিবু মার্কেট বটতলা রেইলগেইট এলাকা থেকে আসামী মোঃ রাসেল (২৩), পিতা-মৃত আব্দুল আওয়াল, সাং নগুয়া বটতলা, থানা ও জেলা-কিশোরগঞ্জ কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রাসেল জানায়, তার পিতা ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আউয়াল, তার মা, তার বোন জামাই একত্রে বসবাস করত। তাদের পরিবার মাদ্রক ব্যবসার সাথে জড়িত। ৪ কেজি গাজাঁর ব্যবসার টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আউয়াল সাথে তার ছেলে, স্ত্রী ও মেয়ের জামাইয়ের মনোমালিন্য চলতেছিল।
মনোমালিন্যের চলাকালে ডিসিস্ট এর ছেলে আসামী মোঃ রাসেল তাহার স্ত্রী, সন্তান নিয়া অন্যত্র বাসা ভাড়া করিয়া বসবাস করতেছিল। ঘটনার দিন ইং ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত্র অনুমান ০২.৩০ টার সময় ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আউয়ালকে মারার উদ্দেশ্যে তার ছেলে আসামী রাসেল, তামিম, রেহেনা আক্তার সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন হাতে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি ডিসিস্ট এর দোকানের সাটারের জোরে জোরে আওয়াজ করতে থাকে।
শব্দ শুনে ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আওয়াল ঘর হতে বের হওয়া মাত্রই তার মেয়ের জামাই আসামী তামিম ডিসিস্ট এর চোখে মরিচের গুড়া ছুড়ে মারে এবং আসামী তামিম তাহার হাতে থাকা শাবল দিয়ে ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আওয়ালকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে এবং আসামী রাসেল তাহার হাতে থাকা শাবল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার সামনে বাম পার্শ্বে আঘাত করে।
ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আওয়াল ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন আসলে তাহাদের সহযোগীতায় ভিকটিম আব্দুল আওয়ালকে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার জন্য অটোগাড়ীতে তোলার সময় পূনরায় উক্ত আসামীগন অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে এলাপোথারী ভাবে মারপিট করে। ডিসিস্ট মোঃ আব্দুল আওয়ালকে প্রথমে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।
জখমীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ বিকালে ভিকটিম আব্দুল আউয়াল মারা যান। গ্রেফতারকৃত আসামীকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করা হলে আসামী মোঃ রাসেল (২৩) ঘটনার সাথে জড়িত বিষয়ে এবং সহযোগী অপরাপর আসামীর নাম উল্লেখ পূর্বক ডিসিস্ট মোঃ ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।