বকশীগঞ্জে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি
বকশীগঞ্জে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি যুবলীগ নেতার,থানায় অভিযোগ
রতন ইনতিসার,বকশীগঞ্জ (জামালপুর)
সাংবাদিক নাদিম হত্যাকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই বকশীগঞ্জে আরেক সাংবাদিককে প্রান নাশের হুমকি দিয়েছেন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন পলাশ। পলাশ বকশীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ আহবায়ক কমিটির সদস্য। রোববার রাতে দৈনিক দেশের কন্ঠ পত্রিকার বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি এম এ ছালাম মাহমুদকে মুঠোফোনে এই হুমকি দেন তিনি। এর আগে উপজেলা আওয়ামীলীগকে অবগত না করে যুবলীগের সদস্য সংগ্রহ সভা ও বকশীগঞ্জ হাসপাতালে রোগীদের দেয়া খাবার মান নিয়ে ফেইসবুকে পৃথক দুটি স্ট্যাটাস দেন সাংবাদিক এম এ ছালাম মাহমুদ। এর জেরেই তাকে হুমকি দেয়া হয়। এই ঘটনায় সোমবার বিকালে বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাংবাদিক ছালাম মাহমুদ।
জানা যায়,গত প্রায় দুই মাস যাবত বকশীগঞ্জ হাসপাতালে রোগীদের খাবার দেওয়ার ঠিকাদারি নিয়েছেন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন পলাশ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রোগীদের খাবার বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করে আসছেন তিনি। গত রোববার দুপুরে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের মাঝে নিম্ন মানের খাবার ও পরিমানের চেয়ে ওজনেও কম দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সাংবাদিক ছালাম মাহমুদ। এর জেরেই তাকে ফোন করে হুমকি দেন যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ফরহাদ হোসেন পলাশ। তাকে বলতে শোনা যায় বিরাট সাংবাদিক হইছেন। এজন্যইতো আপনারা মরেন,মার খান। এই ঘটনা জানাজানি হলে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিক এম এ ছালাম মাহমুদ জানান, সম্প্রতি বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি না নিয়ে যুবলীগের কর্মী সংগ্রহ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। এবং রোববার দুপুরে হাসপাতালে রোগীদের খাবার খাচ্ছেন ঠিকাদার এমন একটি পোস্ট করেন। এতেই দারুণভাবে ক্ষিপ্ত হন যুবলীগ নেতা পলাশ। এরপর পলাশ আমাকে দুই বার ফোন দেয়। কিন্তু আমি ফোন কল রিসিভ করতে পারিনি। পরে আমি তাকে মোবাইল ফোনে কল দিলে কথা বলার এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে “আপনারা অনেক বড় সাংবাদিক হয়ে গেছেন। এই জন্যই তো মানুষ আপনাদের রাস্তায় পিটিয়ে মারে। এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান” বলে হুমকি দেন। আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন পলাশ বলেন, সাংবাদিক ছালামের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু আমি তাকে কোন ধরনের হুমকি দেইনি। আমরা উপজেলা আওয়ামীগের সাধারন সম্পাদকের অনুমতি নিয়েই কর্মী সংগ্রহ সভা করেছি। অথচ তিনি ফেসবুকে দিয়েছেন অনুমতি না নিয়ে করেছি। তাই তাকে ফোনে বলেছি সত্য নিউজ করেন। না হলে “আল্লাহ বিচার করবে”। হত্যার হুমকি দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক আবদুল লতিফ লায়ন জানান, সাংবাদিক নাদিম হত্যার পরপরই আরেক সাংবাদিকে হত্যার হুমকি আমরা কোনভাবেই মেনে নিব না। তাকে গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
এই বিষয়ে জামালপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাজন সাহা রাজু জানান, এই বিষয়ে আমি অবগত না। তবে যদি সে কোন সাংবাদিকে হুমকি দিয়ে থাকে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান,এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিককে হুমকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বকশীগঞ্জে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। সাংবাদিক এম শাহীন আল আমীন,আবদুল লতিফ লায়ন,সাংবাদিক সরওয়ার জামান রতন, সরকার আবদুর রাজ্জাক,আশরাফুল হায়দার, হেদায়েত উল্লাহ হোসনা,জিএম সাফিনুর ইসলাম মেজর, মাসুদ উল হাসান,জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু,মতিন রহমান, রাশেদুল ইসলাম রনি,এমদাদুল হক লালন, আল মুজাহিদ বাবু, মুনতাহেনা আশা, উৎপল মহন্ত,মনিরুজ্জামান লিমন,রাকিবুল ইসলাম বিদ্রোহী, শাহনাজ পারভীন,ইয়ামলিখা,মোহাম্মদ আসাদ,রতন ইনতিসার ও আলমাছ আলীসহ বকশীগঞ্জে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।