বিএনপির নেতাকর্মীদের ২০টি বাসের চাবি জব্দ করা হয়েছে

0 ১১০

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত সমাবেশে যেতে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাস ভাড়া দেওয়ায় শুভযাত্রা পরিবহনের অন্তত ২০টি বাসের কাগজপত্রসহ চাবি জব্দ করা হয়েছে। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশে এসব বাসের কাগজপত্র ও চাবি জব্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার (২ অক্টোবর) বিএনপির সমাবেশ শেষে বাস নিয়ে মানিকগঞ্জের আসার পর সন্ধ্যার দিকে তাদের কাছ থেকে গাড়ির চাবি জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে ২০টি বাসের চালকদের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে যায়। শুভযাত্রা পরিবহনের বাসগুলো মানিকগঞ্জ থেকে রাজধানীর গুলিস্তানে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। সকাল থেকে এসব বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গাড়ির মালিক, চালকসহ শ্রমিকেরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

চালকরা বলছেন, আমরা তো কোনো দল চিনি না, গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। কোন দল তাদের বাস ভাড়া করলো তা  তো দেখার বিষয় নয়। গাড়ির চাকা না ঘুরলে সংসার চলে না।

জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের এক দফা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। গতকাল সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ওই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। ওই সমাবেশে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন পরিবহনের ৩০ থেকে ৩৫টি বাস ভাড়া করে জেলা বিএনপি। এর মধ্যে ২০টির মতো শুভযাত্রা পরিবহনের বাসও ভাড়া করা হয়।

শুভযাত্রা পরিবহনের বাসের দুইজন চালকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, ঢাকায় কৃষক দলের কর্মসূচিতে মানিকগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য শুভযাত্রার ২০ থেকে ২৫টির মতো বাস ভাড়া দেওয়া হয়। সেই ট্রিপ দিয়ে আসার পরে গাড়ির চাবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ধমক দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে তার অনুসারীরা এসব বাসের চাবি নেন। এ বিষয়টি কাউকে না জানাতে তারা হুমকি ধমকিও দেন। অন্যথায় সড়কে গাড়ি চালাতে দেবেন না বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শুভযাত্রা পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, গতকাল সোমবার ওই কর্মসূচি থেকে সন্ধ্যার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসার পর বাসের চাবি ছিনেয়ে নেন জাহিদুল ইসলামের অনুসারীরা। আজ সকালে তারাই আবার প্রশাসনের নাম করে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যায়। রিজার্ভ ট্রিপ মারলে চালকদের দুই হাজার টাকা থাকে, মালিকও কিছু টাকা পান।

একই পরিবহনের আরেক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শ্রমিক মানুষ, গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। আজকে বাস চালাতে পারি নাই। বর্তমানে রুটের অবস্থা খুব খারাপ। সারাদিন বাস চালিয়ে হাজিরাও থাকে না। অনেক দিন বাসের মালিককেও টাকা দিতে পারি না। প্রতিদিন সকালে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস সিরিয়ালে দিলেই মালিক সমিতির লোকজনকে হাজার টাকা দিতে হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রুটে বাস চললে দুই থকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। আমরা শ্রমিক মানুষ, দলমত তো বুঝি না, কাজ করে খাই।

শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসের মালিক কাইয়ুম হোসেন বলেন, আমাদের আগে বলা হয়নি, বিএনপির কর্মসূচিতে বাস ভাড়া দেওয়া যাবে না। বললে হয়তো বাস ভাড়া দিতাম না। বাসের চাকা না ঘুরলে আমাদের সংসারের চাকাও ঘুরে না। আমরা সাধারণ মালিক। এখন কবে গাড়ির চাবি ও কাগজপত্র পাব তাও জানি না।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবীর বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য বাস ভাড়া দেওয়ায় গাড়ির কাগজপত্র ও চাবি নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা নয়। তিনি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, গাড়ির চাবি ও কাগজপত্র নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। আর গাড়ি কি চালকদের নাকি? ওরা (চালক) এ কথা বলে কেন? ওদের (চালক) মালিকদের ব্যাপার।

তিনি এই প্রতিবদককে বলেন, আপনি বলেন, তুমার (চালক) মালিককে নিয়া আসো গা, মালিক বললে আমরা এ বিষয়ে দেখবো।

অভিযোগ পেলে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে নিয়মানুযায়ী গাড়ি চলে। কেউ অনিয়ম করলে খোঁজখবর নিয়ে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিব। গাড়িতে বিএনপি ও জামায়াত চড়তে পারে। গাড়ি সবার জন্যই, সবাই গাড়ি ভাড়া নিতে পারে, এতে তো ঝামেলার কিছু নেই।

যোগাযোগ করা হলে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, বাসের চাবি ও কাগজপত্র নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগও করেনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.