যাদের টাকার বস্তায় আছে তারাই তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়
যাদের টাকার বস্তায় আছে তারাই তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, যারা বলেন জামায়াত দেরিতে নির্বাচন চায় আবার চায় না, সেই বন্ধুরা পাগল হয়ে গেছেন। তারা মনে করেন কালকেই নির্বাচন দিলে ভালো হয়। যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য ১৫ বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি, সেই নির্বাচন যদি আবারও ১৪, ১৮ ও ২৪ সালের মতো হয় তাহলে লাভ কী। আমরা দিন, ক্ষণ, ঘণ্টা, মাস বা বছর বেঁধে দেইনি। আসল কথা হচ্ছে আমরা ভোট কাটতে পারব না, আমাদের টাকাও নেই, মাস্তানও নেই। যাদের টাকার বস্তায় আছে তারাই তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়। তারা ভোট কেটে ভরে ফেলতে পারবে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে বরগুনা পৌরসভার টাউন হল মাঠ প্রাঙ্গণে জামায়াতের বরগুনার জেলা শাখার আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ১৭টি বছরে আমাদের কোনো ভোটাধিকার ছিল না। ১৪, ১৮ এবং ২৪ সালে নির্বাচনের নামে যা করা হয়েছে তাতে বাংলার মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রের রাস্তায় আটকে পুলিশ লীগ ও ছাত্রলীগ বলেছে- ভোট হয়ে গেছে, আপনারা বাড়ি চলে যান। আলেম-ওলামা, দাড়ি-টুপিওলাদের দেখে দেখে জঙ্গি বানিয়ে তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলীসহ অনেক নিরপরাধ নেক মানুষদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ আমরা যারা বিরোধী দলে ছিলাম তাদের ওপরে স্ট্রিম রোলার চালানো হয়েছে। এছাড়াও তিনজন ব্যক্তি বাড়িতে বসে কথা বললেও ধরে নিয়ে গিয়ে বলা হতো নাশকতার ষড়যন্ত্র করেছে। ঘরের মধ্যে কোরআন-হাদিস পাওয়া গেলে বলা হতো জঙ্গি বই পাওয়া গেছে। এমন আজব দেশেই আমরা বসবাস করেছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ভেবেছিল যতদিন শেখ হাসিনা থাকবে আর কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। কোটি কোটি মানুষ যখন তাদের বিপক্ষে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে তখন হাসিনা পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেয়। একের পর এক অত্যাচার, গুম ও খুন শুরু হয়। তবে তরুণ সমাজ আবু সাঈদ মুগ্ধরা গুলির মুখে বুক পেতে দিয়ে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা বাধ্য হয়ে হেলিকপ্টারে বঙ্গভবন ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতির বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ তো গণতন্ত্রের রাজনীতি করে না। খুন, গুম, অত্যাচার, নির্যাতনসহ তারা দেশে তিনটি ভোট হতে দেয়নি। আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষদেরকে ফাঁসি দিয়েছে। একদল ছাড়া আর কোনো দলের রাজনীতি করতে দেয়নি। এমন কাজ কখনোই গণতন্ত্র নয়। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এদেশের মানুষ এত নিষ্ঠুর অত্যাচারী শাসককে আর কখনো বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার দেবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ছয় মাসে একের পরে এক বাধা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ে এসে পড়েছে। নির্বাচনের অভিযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এ সরকারকে বলেছি আপনাদের কোনো দিকে কান দেওয়ার দরকার নেই। সেনাপ্রধান, উপদেষ্টা প্রধান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরকে শক্তভাবে থাকতে আহ্বান করেছি। এছাড়াও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে যে সমস্ত সংস্কার প্রয়োজন তা করেই নির্বাচন দিতে বলেছি। তবে আমরা এই সরকারের আমলে গোটা রাষ্ট্রকে সংস্কারের কথা বলিনি। দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে রাষ্ট্রের সব সংস্কার করাও সম্ভব নয়। আমরা শুধু বলেছি, নির্বাচনের জন্য এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন পাঁচ থেকে ছয়টি বিষয়ে সংস্কার করে যাতে নির্বাচন দেওয়া হয়। আর এ সংস্কার করতে যে সময়ের প্রয়োজন হবে সে সময়টুকু দিতে জামায়াতে ইসলামী রাজি আছে।
বিভিন্ন দলের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ সবাই এখন এক হওয়ার চিন্তা করছে। এছাড়াও বিভিন্ন ছোট-বড় রাজনৈতিক দল নিয়েও ঐক্যের আলোচনা চলছে। যদি আমাদের ঐক্য হয় তাহলে যে কোনো আসন যে কোনো দলকে ছেড়ে দিতেও আমরা রাজি আছি। আমরা সকল ইসলামিক দলকেই ঐক্যের আহ্বান জানাই। ঐক্যের লক্ষ্যে আমার আসনও যদি ছাড়তে হয় তাহলে আমি তা ছেড়ে দেব। সব দলের শাসক আমাদের দেখা হয়ে গেছে, শুধু একটা দলই বাকি আছে। আর তাদের হাতেই আছে কোরআনের সুবিচার। জামায়াতে ইসলাম ক্ষমতায় যেতে চায় না, আমরা ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে চাই।