ব্যবসা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে – বিএনপির নেতা

0 ২৫

চাঁদা না পেয়ে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে বিএনপি

 

নোয়াখালী প্রতিবেদক

১৭ মার্চ ২০২৫

নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নে চাঁদা না পেয়ে কয়েকটি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আবদুল্ল্যাহ আল মামুন নামের এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখম করেছে হামলাকারীরা। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির ছোট ভাই ও কৃষক দলের আহ্বায়কের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।

রোববার (১৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিবপুর গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় ইফতারের পর মুদ্দা মার্কেট এলাকার সাগরের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুল্ল্যাহ আল মামুন। এসময় ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি আরজুর নেতৃত্বে ৮/১০ জন এসে মামুনকে মারধর করে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মামুনের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে পার্শ্ববর্তী খাজা মার্কেট এলাকা থেকে মামুনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ ঘটনার জেরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আরজু ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহমুদের ভাই শুভলের নেতৃত্বে কয়েকটি মোটরসাইকেলযোগে ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী শিবপুর গ্রামে এসে জুঁই অ্যাগ্রো ফার্ম, সাগরের চা দোকান, বিএনপি নেতা মহিউদ্দিনের বাড়িসহ ৭-৮টি বাড়ির বাউন্ডারি গেইট ও ভেতরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এসময় হামলাকারীরা সাগরের দোকানে লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

জুঁই অ্যাগ্রো ফার্মের পরিচালক নূর উদ্দিন আনিস অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় বিএনপি কর্মী নূর ইসলাম গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন লোক মাধ্যমে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। এলাকায় থাকতে হলে, ব্যবসা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে। কিন্তু তাদের চাঁদা দিতে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে তারা আমার খামারে হামলা চালিয়ে গেইট ভাঙচুর এবং খামারের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে খামারে থাকা ৬টি গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম প্রাপ্ত হয়। সকালে প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসক এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত মামুনের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, তার ছেলে কিশোরগঞ্জে গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। গত কয়েক মাস ধরে মামুনের কাছে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে নোয়ান্নই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহমুদের ছোট ভাই শুভল ও ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক আরজু। মামুন এলাকায় আসলে তারা এ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এর সূত্রে ধরে দাবিকৃত টাকার জন্য সন্ধ্যায় সাগরের দোকানে মামুনকে আটক করে মারধরের পর অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা মামুনকে উদ্ধার করি।

নোয়ান্নই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিন উদ্দিন বলেন, মামুনকে অপহরণের পর তিনিসহ লোকজন গিয়ে উদ্ধার করে আনার কারণে আরজু ও শুভলরা সন্ত্রাসীদের নিয়ে তার বসত ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। একজন বিএনপির লোক হয়েও বিএনপি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়া এ নেতা ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহমুদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, সোমবার দুপুরে আমি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো দেখে এসেছি। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। উভয় পক্ষ আমাদের দলের লোক। সবাইকে শান্ত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি দলীয় কোনো বিষয় না। তাদের নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। আমার ভাই শুভল মারামারির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, মারামারি করতে না। এছাড়া যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের একটি পক্ষ হামলা চালিয়ে কৃষক দলের আহ্বায়ক আরজুর হাত ভেঙে দিয়েছে। তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমরা স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে কেউ আমাদের অবগত করেনি। অভিযোগ ফেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.