নরসিংদী চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত

0 ৩১

নরসিংদী চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত

স্টাফ রিপোর্টার 

 

নরসিংদীর পলাশে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই সহোদর ভাই নিহত হয়েছে। এ সময় তাদের বাঁচাতে গেলে মা ও বাবাকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে দুর্বৃত্তরা। তবে নিহতের চাচি হাজেরা বেগমের অভিযোগ, চাঁদা না দেয়ায় দুই ভাইকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

এদিকে পলাশ থানার ওসি জানিয়েছেন, চোর সন্দেহে দুইজনকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে তাদের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, অটোরিকশার ব্যাটারি চুরিকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত। পরে রাতে নিহত সাকিব ও তার ভাই রাকিব লোকজন নিয়ে কর্তাতৈল এলাকায় গেলে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করা হয়। পরে গ্রামবাসী গণপিটুনি দিলে তাদের মৃত্যু হয়।

সোমবার (৩১ মার্চ) রাতে পলাশ উপজেলার কর্তাতৈল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সদর ফাঁড়ির পুলিশ সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

অন্যদিকে দুই সহোদর নিহতের ঘটনায় হাবিব, ওসমান ও রঞ্জু নামে তিনজনকে আটক করেছে পলাশ থানা পুলিশ।

নিহত সাকিব মিয়া (২০) ও তার ভাই রাকিব পলাশের কর্তাতৈল গ্রামের আশ্রাফ উদ্দিনের ছেলে। আহত হয়েছেন নিহতদের বাবা আশ্রাফ উদ্দিন ও তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন।

নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, নিহত রাকিব ও তার বাবা আশ্রাফ উদ্দিন বিদেশে লোক পাঠাতো। তাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। কিন্তু তারা চাঁদা দিতে রাজি হয়নি। সোমবার ঈদ উপলক্ষে সাকিব ও তার বন্ধুরা ঘুরতে বের হয়। তারা কর্তাতৈল এলাকায় বেড়াতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওই সময় দুর্বৃত্তরা সাকিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। এই খবর পেয়ে তার ভাই রাকিব ও তার মা-বাবাসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে যায়। ওই সময় দুর্বৃত্তদের বাধা দিতে গেলে রাকিব ও তার মা-বাবাকে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। মুমূর্ষ অবস্থায় রাকিব ও তার মা-বাবাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে রাকিব মারা যায়। তার মা-বাবাকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতের চাঁচি হাজেরা বেগম বলেন, এলাকার কিছু দুর্বৃত্তরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেয়ায় আজকে ঈদের দিন ঘুরতে গেলে সন্ত্রাসীরা সাকিব ও রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

পলাশ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মনির হোসেন বলেন, চোর সন্দেহে পলাশের বাঘদি গ্রামের লোকজন সকালে একজনকে গণধোলাই দিয়েছে। পরে রাতেও চোর সন্দেহে কয়েকজনকে গণধোলাই দেয়। এতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। চুরির ঘটনায় গণধোলাইয়ে তাদের মৃত্যু, নাকি চাঁদা না দেয়া পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ এলাকাবাসী ডাকাত সন্দেহে পিটিয়েছে। কিন্তু নিহত রাকিব ও তারা বাবা ওসমান নামে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বিদেশে নেয়ার জন্য ও সেখানে কাগজ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু নিহত রাকিব ও তার বাবা ওসমানের কাগজ করে দেয়নি। তা নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এছাড়া অটোর একটি ব্যাটারি চুরির বিষয়ও রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, পলাশের কুড়াইতলী এলাকায় সজল নামে একজনের অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি দায়ে হিমেল নামে একজনকে মারধর করা হয়। ওই সময় নিহত রাকিব শুনতে পায় তারা চাচাকে মারধর করা হয়েছে। এই খবরে রাকিব সেখানে যায় এবং হৈচৈ করেন। পরে রাতে রাকিবের ভাই সাকিব লোকজন নিয়ে কর্তাতৈল এলাকায় যায়। তখন এলাকায় ডাকাত পড়েছে বলে মসজিদের মাইকিং করা হয়। পরে গ্রামের লোকজন তাদের পিটুনি দেয়। এরপর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে সাকিবকে মৃত ও অন্যদের ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে রাকিবও মারা যায়।

এ ঘটনার নেপথ্যে কিছু রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। এদিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে হাবিব, ওসমান ও রঞ্জু নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.