এনসিপির বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির নেতার হামলা

0 ১৬

এনসিপির বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির নেতার হামলা

 

জেলা প্রতিনিধি মোংলা

মোংলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইংয়ের ডাকা পূর্বঘোষিত সমাবেশ এক যুবদল নেতার নেতৃত্বে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে। সমাবেশস্থল এলাকায় পৌঁছামাত্রই এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের এক নারী নেত্রীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পৌর শহরের শাহাদাত মোড় চত্বরে হামলার এ ঘটনা ঘটে। এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সমর্থিত স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে এ সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সমাবেশ স্থলে না পৌঁছে প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটে রক্ষা পেয়েছেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাত সাড়ে ৮টায় মোংলা ত্যাগ করেন। এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও’ স্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন শ্রমিকরা তাদের ওপর হামলা চালান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় এনসিপির শ্রমিক উইং মোংলা বন্দরে জাহাজে কর্মরত মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের নিয়ে শ্রমিক সংঘ চত্বরে সাধারণ সভার আয়োজন করে। এনসিপির কেন্দ্রীয় শ্রমিক উইংয়ের নেতারা এদিন আসতে দেরি করেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শ্রমিক সংঘ সংলগ্ন পৌর শহরের শাহাদাত মোড় চত্বরে পৌঁছালে তাদের মিছিল ও যাত্রারোধ করেন বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকসহ তাদের সহযোগীরা। এ সময় শুরু হয় হট্টগোল। একপর্যায়ে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।

এর আগে সোমবার দুপুরে শ্রমিক সংঘ চত্বরে পূর্বঘোষিত সমাবেশস্থল দেখতে গিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও শ্রমিক উইংয়ের স্থানীয় নেতা তিতুমীর চোকদারসহ তিন-চার জন শ্রমিক হামলা ও মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় মোংলা বন্দরে শ্রমিক সংগঠন দখল নিয়ে বিএনপি ও এনসিপি মুখোমুখী অবস্থান নেয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় এনসিপির প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এনসিপির এ কর্মসূচির প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে মোংলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক নেতারা। এ সময় লিখিত বক্তব্যে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তারা। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগের দোসর চক্র এনসিপির ওপর ভর করে মোংলা বন্দরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাট জেলা যুবদলের সদস্য ও মোংলা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আলাউদ্দিন নিজেকে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সভাপতি দাবি করে বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের জিম্মিসহ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে এনসিপি সমর্থিত শ্রমিক নেতা তিতুমীর আওয়ামী লীগের দোসর।’

বিএনপির এই সংবাদ সম্মেলন ও ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল এবং মঙ্গলবার বিকালে মোংলায় শ্রমিক উইংয়ের সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকে শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকাল ৩টা থেকে শ্রমিক সংঘ চত্বর ও আশপাশে পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দুপুর থেকে মোংলা শহরের বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও মহড়ায় শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাচীর ভেদ করে শ্রমিকদের কোনও পক্ষ সভাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। আর দ্বিধাবিভক্ত শ্রমিকদের হামলা ও পাল্টা হামলায় পণ্ড হয় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশ।

এ বিষয়ে এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী মোশারফ হোসেন স্বপন বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বন্দরের শ্রমিক সংগঠন অকার্যকর রেখে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর জুলুম করা হয়েছিল। এই সংগঠনের নির্বাচন ও তলবি সাধারণ সভায় অতিথি হিসেবে আমি এবং কেন্দ্রীয় নারী নেত্রীসহ আট নেতা যোগ দিতে এসেছিলাম মোংলায়। কিন্তু আমাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও’ স্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে এনসিপির শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় কমিটি কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’

হামলার পর বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় বাগেরহাট জেলা যুবদলের সদস্য ও মোংলা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তার পাশে অবস্থান করছিলাম। এ সময় শ্রমিক নামধারী তিতুমীরের নেতৃত্বে বহিরাগতরা মিলে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে সাত জনকে আহত করেছেন। আমরা তাদের ওপর হামলা করিনি।’

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান dhaka post news কে বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। তবে এ নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পৌর শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.