কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে টাকা ও মাংস চুরির অভিযোগ

0 ১৭

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে টাকা ও মাংস চুরির অভিযোগ

 

জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে টাকা ও মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন (৪০) নামে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই নারীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১০ জুন) কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী রিনা। মামলায় তিনজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ।

এর আগে, সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী রিনা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ভুক্তভোগী রিনা খাতুন কুমারখালীর মির্জাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী।

এ বিষয়ে রিনা খাতুন বলেন, সোমবার বিকেলে প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপনের বাড়িতে তাকে ডাকতে যাই। এ সময় তার স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেন। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে আবার বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করেন। মুক্তি ও পারভিন নামে আরেকজন মিলে মাথার চুল কেটে দেন। এ ছাড়া আমার বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করেন। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর সঠিক বিচার চাই। জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রিনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক মানুষ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। কেউ মারতে যাচ্ছে। কেউ হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এসব দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এরপর তাকে রিপন ও তার স্ত্রী বাড়ির উঠানে পেঁয়ারা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

এদিন রাত ৮টার দিকে স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েকজন নারী-পুরুষ রিনার বাড়িতে ভাঙচুর করেন। তাকে তুলে নিয়ে ফের রিপনের বাড়িতে নিয়ে আসেন। ব্যাপক মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেন। পরে সেখানে রিনার স্বজন ও এলাকাবাসীদের নিয়ে সালিশ বসান শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। সালিশে রিনার দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, রিনা ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেন। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।

এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত কাশেম আলী বলেন, রিনা বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু, ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কী ঘটেছে তা জানি না। আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল মামলা হয়েছে। মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.