মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ না করেই ‘দায়িত্ব পালন’

0 ৩৭

মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ না করেই ‘দায়িত্ব পালন’

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৯ জুন ২০২৫,
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেন শপথ গ্রহণ না করেই ‘দায়িত্ব পালন’ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরআগে দীর্ঘ দিন ধরে তার অনুসারীদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক পরিষেবা কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সেবাপ্রাথী ভুক্তভোগীরা ঠিকমতো সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গত কয়েকদিন ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক, ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে বৈঠক পর বুধবার নগরভবনে মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। পরে আবার এডিস মশা ও করোনা ভাইরাস দক্ষিণ সিটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইশরাক হোসেন।

এর আগে গত ১৫ জুন নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে প্রথম সভা করেন তিনি। যেই সভার ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা ছিল। ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন তিনি।

গত ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। জরুরি প্রয়োজনে এসে এসময় সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের বারবার ঘুরে যেতে হয়েছে। সেময়র দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ইশরাকপন্থি কর্মচারীরা নগরভবনের মূল ফটক আটকে রাখার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে রাখে। এতে করে সেবাপ্রার্থী নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ ছিল না।

পরে ঈদের বিরতির পর ১৫ জুন থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে ফের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে। ইশরাক হোসেন উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

সেময় তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন এই বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করে বিষয়টি দেখেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন।

এদিকে সেবা নিতে এসে বারবার ঘুরে গিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ সেবাসহ ২৮ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে সিটি কর্পোরেশন। গত এক মাসেরও বেশি সময় ডিএসসিসি নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকার কারণে এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী।

আজিমপুরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, আমার বাচ্চার মা অসুস্থ, তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাবো। কিন্তু আমার বাচ্চার পাসপোর্ট করানো নেই। এরজন্য দরকার জন্ম নিবন্ধন, গতমাসে কয়েকবার সিটি কর্পোরেশনের গিয়ে বারবার ফিরে এসেছি। সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখনও বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করাতে পারেনি।

একইভাবে বকশিবাজেরর বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, আমার ট্রেড লাইসেন্স ঝুলে আছে। বারবার সিটি কর্পোরেশনে গেলেও এটার কাজ করানো সম্ভব হয়নি। তারা বলছে সব ধরনের সেবা বন্ধ তাই গত মাস থেকে বেশ কয়েকবার গিয়েও এটার সমাধান হয়নি, ফলে ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজধানীতে বৃষ্টি চলছে, অনেক রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন কাজ তদারকি করা, কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না নগরভবন অবরুদ্ধ থাকার কারণে। বর্ষার কারণে অনেক রাস্তায় ঘানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন নাগরিকরা সেবা নিতে এসে ফিরে যেত হচ্ছে তাদের। অনেক কর্মকর্তা তাদের দাপ্তরিক কাজ করা বা অফিস করতে পারেছন না।

তারা বলেন, মশার ওষুধ দেওয়া, বর্জ্য অপসারণ, সড়কবাতির রিপেয়োরিং সহ সব কাজের বিঘ্ন ঘটছে। প্রতিদিন নগর ভবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে যান পাঁচ থেকে সাত হাজার নগরবাসী। তাদের এই প্রয়োজনগুলো মিটছে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সেবা কার্যক্রম দিনের পর দিন নগরবাসীর এই ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না। জোর করে নিজের তত্ত্বাবধানে নগর ভবন পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়াটা খারাপ দৃষ্টান্ত।

ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইশরাকের মতবিনিময়

এডিস মশা ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বুধবার (১৮ জুন) নগর ভবন মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

এসময় তিনি মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ ইস্যুতে ঢাকাবাসীর যৌক্তিক দাবির আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকার সৃষ্ট নাগরিক ভোগান্তির সুরাহার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনাও দেন।

বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন আঞ্চলিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের মাঝে নাগরিক সেবা দিতে ইশরাক হোসেনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা তাদের বাধা দিয়ে এসেছে। যাতে চলমান আন্দোলনে নাগরিক ভোগান্তির সব দায়ভার ইশরাক হোসেনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায়। তারপরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সেসব অবৈধ নির্দেশনা না মেনে নাগরিক সেবা চলমান রেখেছেন বলেও জানান তারা।

এ সময়, আন্দোলনের পাশাপাশি নাগরিক সেবা সচল রাখতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান ইশরাক। একইসঙ্গে যেকোনো অবস্থায় তাদের পাশে থাকারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনের পক্ষে অবস্থানকারীদের ওপর কোনো অশুভ পক্ষ থেকে যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো আচরণ করা হয় তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আমার সর্বশক্তি দিয়ে আপনাদের পাশে অবস্থান নেব এবং তাদের সব চক্রান্তের দাঁত ভাঙা জবাব দেবো।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মতবিনিময় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকাবাসী আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান। এ ছাড়াও ডিএসসিসির সাবেক কাউন্সিলর মকবুল হোসেন খান টিপু, মো. মোহন, মো. রফিক, মো. মামুন আহমেদ, সুরাইয়া বেগম, সামসুল হুদা কাজল এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসসিসি মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ, শপথের সুযোগ নেই : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুনদের শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই।

বুধবার (১৮ জুন) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, পরবর্তী সেখানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে মনে হয়েছে, আমরা আরও পরিপক্বভাবে বিষয়টি সামাল দিতে পারতাম। এখন দেখা যাচ্ছে, এক ধরনের অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে সিটি কর্পোরেশন। আগের মাসের তুলনায় গত মাসে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। এখন পুরোপুরি দখলদারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কর্পোরেশনের অফিসগুলোও এক ধরনের দখলে চলে গেছে, ফলে আমরা সেবা দিতে পারছি না।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমাদের আর শপথ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু কমিশন নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা গেজেট প্রকাশ করেনি অথচ ১৫ দিন পর এসে জানিয়েছে। তখন গেজেটের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে, ২০ দিন পার হয়ে গেছে। একদিকে একটি অকার্যকর গেজেটকে আবার সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়েছে এটা আমাদের জন্য খুব বিভ্রান্তিকর।

আসিফ আরও বলেন, আপিল বিভাগ যেভাবে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ গেজেটটি কার্যকর থাকলেও ২০ দিন আগেই সেটি অকার্যকর হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের যে সিটি কর্পোরেশন, তার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। আমি নিজে আইনজ্ঞ না, তবে আমাদের আইন উপদেষ্টা বিষয়টি খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি একজন প্রফেসর ও আইন বিশেষজ্ঞ। আইন মন্ত্রণালয় দেখেন, তিনি বিষয়টি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, আমি যতটুকু বুঝেছি, তা-ই বলছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.