জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত ও বেরিয়ে যাওয়া নেতারা আবারও এক মঞ্চে

0 ৩১

জাতীয় পার্টির (জাপা) বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত ও বেরিয়ে যাওয়া নেতারা আবারও এক মঞ্চে

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৪ জুলাই ২০২৫,
জাতীয় পার্টির (জাপা) বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত ও বেরিয়ে যাওয়া নেতারা আবারও এক মঞ্চে বসেছেন। দলকে নতুন করে শক্তিশালী করতে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সোমবার ( ১৪ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় এই নেতাদের একত্র দেখা যায়।

সম্প্রতি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের দল থেকে দুই কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেন। নতুন মহাসচিব নির্বাচন করা হয় শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। এরপর এই ঐক্য সভা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে আসে।

সভায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সরকার আসে, সরকার যায়। একটা স্থিতিশীল ব্যবস্থা বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠে নাই। সবাই চায়, দেশের মানুষের ভালো থাকুক। কিন্তু, যেকোনো কারণেই হোক, সব সরকারই ভালো কাজ করতে পারেন না। সংস্কারমূলক কাজ করতে পারেন না।

এরশাদ সংস্কারমূলক কাজ করেছে বলে দাবি করে মঞ্জু বলেন, এই স্মরণ সভায় আমি এসেছি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। অনেকেই বলে, আমি তো জানি না অতো, সম্রাট আকবরের পর এতো সুন্দর মন্ত্রীসভা আর কেউ গঠন করতে পারেন নাই।

সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা একজোটেই ছিলাম, এখনো আছি। রাজনৈতিক কারণে এবং আমাদের সরকার ছিল না এই ৩৫ বছর। ফলে, যে যখন আসছে তখন আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। আমরা একজোটে ইলেকশনও করতে পারিনি। হৃদয়ে অনেক ব্যথা।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজ পল্লীবন্ধু আমাদের কাছে নাই, কিন্তু তার কাজ আমাদের মাঝে আছে। তার অসম্পন্ন কাজ রয়ে গেছে। আমরা মনে করি, তার দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত। গ্রামে মানুষ এখনো বলে, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমি সবাইকে বলবো আসেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেব।

জাতীয় পার্টির (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আজ জাতীয় পার্টির জন্য ঐতিহাসিক দিন। যে মুহূর্তে জাতীয় পার্ট খণ্ড হতে-হতে খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে পল্লীবন্ধু এরশাদের সঙ্গে যারা জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই সব নেতা আজ এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন।

জি এম কাদেরকে ‘সুযোগসন্ধানী লোক’আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আপনার ভাইয়ের মৃত্যুর পরে আবার আপনি সেই সুযোগ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে চট করে বড়ো-বড়ো নেতাদের আপনি বের করে দেন। আরে ভাই, এটা কি তেল কোম্পানি? আপনি তার ম্যানেজার? আপনি পিয়ন সব বের করে দেবেন? এটা রাজনৈতিক দল। রাজনীতি করতে হলে সব মানুষকে নিয়ে করতে হয়। আপনি কি লোক! শুধু বউ নিয়ে রাজনীতি করা যায় না, ঘর করা যায়।

নিজেদের জানা-অজানা ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়ে তিনি বলেন, আজকে এখানে যারা আছেন, সবাইকে নিয়ে আগামী দিনে আমরা নতুন করে জাতীয় পার্টিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব; এটি হোক আজকে আমাদের প্রত্যাশা।

সদ্য অব্যহতিপ্রাপ্ত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এরশাদের মতো নেতা আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে আসবে কিনা সন্দেহ আছে। আজ বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থাটা দেখেন, একটি বড় রাজনৈতিক দল গত আট মাসে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

পুরনো নেতাদের এক করে শীঘ্রই কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ মাঠে নাই। এই দেশের মানুষ একটি মধ্যপন্থার গণতান্ত্রিক দলকে খুঁজছে। সেই দল হতে পারে, সুযোগ আছে একমাত্র জাতীয় পার্টির।

চুন্নু আরও বলেন, আমার বন্ধু রুহুল আমিন হাওলাদার সঠিক সময়ে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী দিনে আমাদের একটা সম্ভাবনাময় সুযোগ আছে। আমি তাকে বলব, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে খুব শীঘ্রই একটা কাউন্সিলের ব্যবস্থা কর।

সদ্য বহিষ্কৃত জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেপির (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য (রওশন) আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় পার্টির (ডা. মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, প্রেসিডিয়াম সদস্য (কাজী জাফর) দিদারুল আলম চৌধুরী, জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি ও  সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.