অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন’র মৃত্যুতে স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত
দেশবরণ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন’র মৃত্যুতে স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত
রিপোর্টার : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পলক
সাধারণ সাংবাদিক সমাজ কর্তৃক দেশবরণ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমনের মৃত্যুতে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল ৪ ঘটিকায় ডিআরইউ’র সাগর রুনী মিলনায়তনে দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ’র সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সাধারন সাংবাদিক সমজ’র প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মাসুদের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ’র সভাপতি আবু সালেহ আকন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত ও স্মৃতিচারন করেন ডিআরইউ’র প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন, মেহেদী হাসান রিয়াদ, মুন্না খান, জিয়াউর রহমান, ইমরান হোসেন, হাফিজুর রহমান শফিক, এইচ এম আল আমিন, সৈয়দা রিমি কবিতা, নিয়ামুল হাসান নিয়াজ, চামেলি রহমান, মুস্তাকিম নিবিড়, আজিজুল ইসলাম যুবরাজ, ফয়সাল আহমেদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন, জিয়াউল হক তুহিন, আকাশ মনি, জাহাঙ্গীর আলম পলক, জুয়েল খন্দকার, শফিকুর রহমান, রাজু, বাবু, আলম সহ অন্যান্য পত্রিকা টিভির সংবাদকর্মী বৃন্দ।
স্মৃতিচারন কালে অনেকেই বলেন, দেশ সেরা বিভিন্ন দৈনিকে চার সহস্রাধিক লীড, ব্যাক লীড প্রকাশের অনন্য নজির একমাত্র রিমনেরই রয়েছে। তাছাড়া সকল বিষয়ে রিপোর্টিং করার রেকর্ডটাও একমাত্র তারই দখলে। সুপ্রাচীন অতীত কিংবা সুদূর আগামিতেও এ রেকর্ড কেউ ছুঁয়ে দেখবেন-এমনটা কল্পনা করাও অবাস্তব। জাতীয় পর্যায়ের প্রথম শ্রেণীর সকল গণমাধ্যমে রিপোর্টারগণ সাধারনত বিট ভিত্তিক’ রিপোর্ট করে থাকেন। কেউ পলিটিক্যাল, কেউ ডিপ্লোম্যাটিক, কেউ ইকোনোমিক, আবার কেউ কেউ স্পোর্টস কিংবা বিনোদন বিটের রিপোর্ট করেন। কালেভদ্রে কোনো রিপোর্টারকে একাধিক বিটে কিছু রিপোর্ট করার দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সাঈদুর রহমান রিমনের ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শেয়ারবাজার, অপরাধ, বিনোদন, নাগরিক সেবা সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পার্লামেন্ট, কুটনৈতিক, দুদক, নির্বাচন কমিশন, আইসিটি, মেডিক্যাল, প্রতিরক্ষা, কৃষি, শিক্ষাসহ সকল বিটের সব বিষয়ে দেদারছে রিপোর্ট করার এন্তার নজির রয়েছে। এমনকি আইন বিষয়ে বিস্তৃত ধারনা না থাকলে আইন-আদালত সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়ে কারো রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে অলিখিত নিষেধাজ্ঞাই দেয়া আছে সকল গণমাধ্যমে। অথচ নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বিষয়ে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রিপোর্টগুলোও অবলীলায় তৈরি করেছেন রিমন। সকল বিষয়েই আশ্চর্যরকম পারফরমেন্স দেখিয়েই ঈর্ষনীয় পর্যায়ের গৌরবের অধিকারী হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তবতায় একমাত্র মেশিনম্যান রিমনের পক্ষেই এটা সম্ভব। অথচ বিনয়ী রিমনের কন্ঠে ‘এখনও ভাল মানের রিপোর্টার হতে না পারার’ আক্ষেপের সুর বাজে। যেন মোটেও তিনি ক্লান্ত হননি, মেটেনি তার লেখার সাধও। একথা বললে বেশি বলা হবে না যে, সাঈদুর রহমান রিমনের জন্মই হয়েছে রিপোর্ট করার জন্য।
সাঈদুর রহমান রিমন ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলাস্থ জাবরা পীরবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ইউনুস উদ্দিন আহমেদ ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। ষাটের দশকে তৎকালীন দৈনিক পাকি¯াÍ ন (পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা)- এর সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। মা সাহারা আহমেদ ছিলেন একজন গৃহিনী। সাঈদুর রহমান রিমন তার চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ট। তিনি ১৯৮৪ সালে এসএসসি, ১৯৮৬ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯০ সালে বাংলায় অনার্স পাশ করেন।
সাভার কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৮৫ সালে তৎকালীন পাঠক সমাজে ব্যাপক সমাদৃত সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী পত্রিকার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত একটানা আট বছর তিনি দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘সাভার সংবাদদাতা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক ইত্তেফাকে ধামরাইয়ে মুক্তিপণ আদায়কারী চোখবাঁধা পার্টির নির্মমমতা, মানুষের কংকাল-হাড়-রক্ত-কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির রোমহর্ষক কাহিনী উদঘাটন, শিশু খাদ্যের গুড়ো দুধে বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয়তা শীর্ষক সাড়া জাগানো নানা প্রতিবেদন রচনা করে ব্যাপক আলোচিত হন।
১৯৯৪ সালে রিমন ঢাকায় দৈনিক আলআমীন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে এবং ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। রিমন ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে দৈনিক মুক্তকন্ঠ পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এবং ২০০৪ সালের মে মাস থেকে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক সংবাদ’এ দায়িত্ব পালন করেন রিমন।
২০০৯ সালে বসুন্ধরার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সাড়া জাগানো বাংলানিউজ ২৪.কম অনলাইনে ক্রাইম ইনচার্জ হিসেবে এবং ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং সেল এর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ১ মে তিনি দৈনিক দেশবাংলা‘র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদে নিয়োগ লাভ করেন। ২০২৩ সালের ১ জুন সাঈদুর রহমান রিমন দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবেও মর্যাদা লাভ করেন। এসব ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে দৈনিক খবর বাংলাদেশ, নতুন সময়, দৈনিক অন্যদিগন্ত, সাপ্তাহিক দেশপত্র, নতুন বার্তা, সাপ্তাহিক সাফকথা’র প্রধান সম্পাদক সহ সর্বশেষ দৈনিক বাংলাভূমি’র প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাঈদুর রহমান রিমন গত ৩০ জুলাই বুধবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজে মৃত্যু বরন করেন, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।