বিএনপি ও জামায়াতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত
বিএনপি ও জামায়াতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত
জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
৭ আগস্ট ২০২৫,
ঝিনাইদহে স্কুলের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে সদর উপজেলার ইসলামপুর হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিন মাস আগে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি হন জামায়াত সমর্থিত জহুরুল ইসলাম। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ চলে আসছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক লোকজন নিয়ে স্কুলে এলে ক্রীড়া শিক্ষক হাসানুর রহমান সেখানে লোকজন নিয়ে হাজির হন এবং স্কুলে ঢুকতে বাধা দেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে জামায়াতের ৯ জন ও বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আহত হন।
বিএনপির আহতরা হলেন- কানুহরপুর গ্রামের ইমদাত মোল্লা, একই গ্রামের মাসুম, গোলাম মোস্তফা, সুমন, রেহানা খাতুন ও মহারাজপুর গ্রামের রহমতুল্লাহ।
জামায়াতের আহতরা হলেন- জহুরুল ইসলাম, হুসাইন, মুজাব আলী, হাফিজুর রহমান, রুপচাঁদ আলী, ফয়জুল্লাহ, সলেমান মন্ডল, তোতা মিয়া ও সফর আলী। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আহতরা সবাই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দুই দলের আহত নেতাকর্মীরা আরেক দফায় মারামারিতে লিপ্ত হন। এ সময় সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হামলার বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াত পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
ইসলামপুর হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম জানান, স্কুলের পরিচালনা কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই আমাদেরকে স্কুলে ঢুকতে দেয় না। তাদের সাথে মতবিরোধ থাকাই বিভিন্ন সময়ে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেয়। আজ স্কুলে মিটিং ছিল। সকালে স্কুল খুলার আগেই আমরা স্কুলে য়ায়। এ সময় তারও স্কুলে যায়। মূলত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের কিছু লোকের সাথে মিলে বিএনপিরা কোনো উসকানি ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করে। আমিসহ বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় এখন হাসপাতালে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি মো. শাহাজান আলী বিশ্বাস বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন মন্টু নিজে কৌশল করে একটি পকেট কমিটি করেছে। সেই কমিটিতে জহুরুল ইসলামকে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন মন্টু, শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তফা এবং অভিভাবক সদস্য লাভলু (লাবু) চারজন আছে। তার মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তফা এবং অভিভাবক সদস্য লাভলু (লাবু) পদত্যাগ করেছে। সে কারণে ডিসি অফিস থেকে এলাকায় তদন্ত করে কমিটি না রাখার জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কিছু না মেনে আজ মিটিং করতে যায়।
তিনি আরও বলেন, দাতা সদস্য আমির উদ্দীন মোল্লার ছেলে এমদাত মোল্লা আমাকে সকালে ফোন দেয়। তার ফোন পেয়ে আমি এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন মিলে স্কুলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি প্রধান শিক্ষক, সভাপতি বেশ কিছু লোকজন নিয়ে স্কুল দখল করার জন্য স্কুল খুলার আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত হয়েছে।
আমরা সেখানে যেতে না যেতেই এমদাত মোল্লার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন, জহুরুলসহ তার বাবা, ভাইসহ সবাই এমদাতের ওপর হামলা করে। জহুরুল এমদাতকে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চার মাস আগে স্কুলের কমিটি করা নিয়ে মারামারির সূত্রপাত হয়। একপক্ষ কমিটি মানতে নারাজ। তারাই বৃহস্পতিবার হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ওসি জানান, এখনো থানায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। তবে দুই পক্ষ মামলা দিলে তা রেকর্ড করা হবে।