বিআইডব্লিউটি এর ২ ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

0

বিআইডব্লিউটি এর ২ ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। স্ত্রীর নামে জাহাজ

 

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কতিপয় কর্মকর্তা মিলে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, নৌবন্দর ইজারা, নদীর ড্রেজিং, নদী থেকে বালু উত্তোলন, জাহাজ চলাচলের অনুমোদনসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর ঘুষ, দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী দুই ডজন

 

কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান তানজির হাসিব সরকারের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। সূত্র জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে সাত কর্মকর্তা তাদের অবৈধ টাকা বৈধ করতে স্ত্রীদের জাহাজের মালিক বানিয়েছেন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ কিনে দিয়েছেন।

দুদকের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চারটি পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। একই বছরের অক্টোবর মাসে বিআইডব্লিউটিএর দুই ডজন কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে দুদকে চিঠি পাঠানো হয়। এরপরই দুদক তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নামে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাতজন কর্মকর্তাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ বিনিয়োগ করে রোজ ডজন লিমিটেড নামে একটি জাহাজ কোম্পানি গঠন এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের নামে শেয়ার ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়। একই সঙ্গে তাদের স্ত্রীদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট, প্লট ও ব্যাংক ব্যালান্স করার তথ্য রয়েছে।

জানা গেছে, দুদক যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে তাদের একজন হলেন বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শামীমা আক্তার। শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে বিআইডব্লিউটিএতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি চাকরিতে যোগদানের পর স্ত্রীকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেখান। শফিকুল ইসলাম ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিচালক (সচিব) হিসেবে অবসরে যান। এর আগে তিনি ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল স্ত্রী শামীমা আক্তারের নামে রোজ ডজন কোম্পানিতে ১৫ লাখ টাকা শেয়ার কেনেন।

তার রাজাবাজার এলাকার মাসুম ভ্যালি ভবনের দ্বিতীয়তলায় ১১৫০ বর্গফুট ও কার পার্কিংসহ একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কুড়িগ্রামের তরকপুরে ২২ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন ও টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করেন। তার ধানমন্ডিতে ৮৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে। এসব সম্পদের মূল্য দেখান ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার ৮০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, লিজেন্ড-১০ শিপিং লাইনসে ৪০ লাখ টাকার শেয়ার, এমভি শুভেচ্ছা-১-এ ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার, জেমস্টোনে ১০ লাখ টাকার শেয়ার, একটি জিপ গাড়ি ও ১৫ ভরি স্বর্ণসহ আবসাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস মালামাল রয়েছে। তার স্ত্রী শামীমা আক্তারের বগুড়া সদরের ছয়পুকুরিয়ায় আড়াই শতাংশ জমি ও ছয়টি দোকান, ঢাকার পশ্চিম জাফরাবাদে ১২৩০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে ১২৩০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।

তার রোজ ডজন কোম্পানিতে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা শেয়ার, জেম স্টোন শিপিং লাইনসে ৪০ লাখ টাকা, রিলায়াবল অয়েল কোম্পানিতে ৪৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ, একটি প্রাইভেট কার ও ২০ ভরি স্বর্ণসহ আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস মালামাল রয়েছে। শামীমা আক্তার ট্যাক্স দিয়ে ১’কোটি ১৬ লাখ ১৮ হাজার কালো টাকা সাদা করেছেন। আয়কর নথি অনুযায়ী, শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। বাস্তবে তাদের সম্পদের মূল্য আরও অনেক বেশি। এসব সম্পদের মধ্যে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এদের প্রধান গডফাদার শফিকুল হক ও তার স্ত্রী শামীমা আক্তার, রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালকা গুলহার আলী, যুগ্ম পরিচালন নাহিদ, শাহজাহান সিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, কাওছার আহমেদ এরা নিয়মিত বালু ব্যবসায়ী ইজারাদার, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.