গলাচিপায় কালবৈশাখীর তান্ডবে দিশেহারা সাধারণ মানুষ
মোঃ নাসির উদ্দিন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর গলাচিপায় কালবৈশাখীর তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সোমবার (১৫ মে) ও মঙ্গলবার (১৬ মে) পরপর দুদিনের কালবৈশাখীর তান্ডবের সাক্ষী গলাচিপার পানপট্টি, গলাচিপা সদর, গোলখালী, আমখোলা ইউনিয়নের একাধিক গ্রামবাসী। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পানপট্টি ইউনিয়নের সতিরাম, বিবির হাওলা, পানপট্টি লঞ্চঘাটসহ বেশ কিছু গ্রাম ও এলাকা।
এতে শত শত গাছপালা সহ ভেঙ্গে গেছে বহু ঘরবাড়ি। আবার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে পানপট্টি ইউনিয়নের বিবির হাওলা গ্রামের জেলে মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘রাতে মাছ ধরার নৌকা থেকে বাড়ি এসে গোয়াল ঘরে গরু বাধতে যাই। এ সময় হঠাৎ করে ঝড়ে আমার ঘরের ওপর একটা বড় গাছ পড়ে মাটির সাথে মিশে যায়।
ঘরের অবস্থা বেগতিক দেখে সন্তানদের নিয়ে পাশের মাঠে গিয়ে আশ্রয় নেই। এ বিষয়ে রাহিমা বেগম বলেন, আমি ঘরের মধ্যে আছিলাম। হঠাৎ দেহি ঝড়ের বাতাসে আমাগো ঘরের চাল উইড়া যাইতেছে। ঘরডা কাইত হইয়া যাইতেছে। এ্যার মধ্যে ঘরের উপরে একটা মোডা গাছ পইড়া ঘরড়া ভাইংগা গ্যাছে। আমি আমার পোলাডারে লইয়া বাঁশঝাড়ের কোনায় যাইয়া খারাই।
এহন আমি ক্যামনে আবার এই ঘর বানামু। আমার স্বামীর এত স্বম্বল নাই। এহন সরকার যদি আমাগো জন্য কিছু করে। একই ইউনিয়নের গুপ্তের হাওলা গ্রামের মো. রফিক হাওলাদার বলেন, ‘আকাশের অবস্থা খারাপ দেইখ্যা আমি গরুর কাছে যাই। এর মধ্যেই আমার বাচ্চারা চিৎকার করে ঘর ছেড়ে দৌঁড়ে বাইরে চলে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি আমার ঘরের চালের উপর বড় একটি চাম্বল গাছ চাপা দিয়েছে। আল্লাহ এখন শুধু প্রাণ বাঁচাইছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানপট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বেশির ভাগই জেলে। এরা দিন আনে দিন খায়। এদের এক এক পরিবারের দু’তিনবার নদী ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এদের পক্ষে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ইউনিয়নের মানুষের দিকে সুদৃষ্টি দিলে এরা আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কবল থেকে বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু তার একদিন পরই কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে অনেক ঘর বাড়ি ও গাছ পালার ক্ষতি হয়েছে। আমি সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদেরকে আমরা স্থানীয়ভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কাছ থেকে আবেদন নিচ্ছি। যাতে আবেদনগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো যায়।